ডেস্ক নিউজ : বর্তমানে রেল ব্যবস্থা যথেষ্ট সেবা দিচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সারাদেশে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। আর সেদিকে নজর রেখেই কাজ করে যাচ্ছে সরকার। সারাদেশে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আধুনিক, উন্নত এবং বহুমুখী করার হবে।’
তিনি বলেন- ‘বঙ্গবন্ধু রেল সেতু নির্মিত হলে আমরা ট্রান্স রেলওয়ে এশিয়ার সাথে সংযুক্ত হয়ে যাব, যা আমাদের জন্য বিরাট পাওয়া। এ জন্য জাপান সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ।‘
আজ রোববার সকাল ১১টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ডাবল-লাইন ডুয়েল-গেজ বিশিষ্ট বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রেল সেতুটির নির্মাণ সম্পন্ন হলে আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে। উত্তরবঙ্গে সবসময় মঙ্গা লেগেই থাকত। আমি ১৯৮১ সালে দেশে আসার পর প্রতিবছরই প্রায় উত্তরবঙ্গে মঙ্গা দেখেছি। তাই আওয়ামী লীগের নেতারা আমরা ছুটে যেতাম, বিভিন্নভাবে মানুষকে সহযোগিতা করতাম। গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর ও নীলফামারীতে মঙ্গা লেগেই থাকত।’
তিনি বলেন, ‘যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলেই অর্থনীতি সচল হয়। মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা আসে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো- রেলের ওপর আঘাত এসেছে বারবার। কিন্তু দেশটা আমাদের, আমাদেরকেই জানতে হবে কিভাবে উন্নতি করতে হবে।’
জাপান সরকারের প্রশসংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ যখন জাতির পিতা গড়ে তোলার চেষ্টা করেন, তখন জাপান সবসময় আমাদের পাশে ছিল। তাই, জাপানের এমন সহযোগিতা সবসময় আমরা স্মরণ করি।’
তিনি বলেন, ‘জেনারেল এরশাদ ক্ষমতায় থাকাকালীন প্রথম এই রেল সেতুর উদ্যোগ নেয়া হয়। সে সময় থেকে আমার একটা প্রস্তাব ছিল এ সেতুতে রেল লাইন থাকতে হবে। কিন্তু সে সময় অর্থায়নকারী বিশ্ব ব্যাংক জানায়- এই যমুনা সেতুতে রেললাইন দিলে ভালো হবে না। কিন্তু পরবর্তীতে আমি দেশ ও বিদেশে গিয়ে বিশ্বব্যাংকের সাথে এ নিয়ে কথা বলেছি। কারণ এটা ছিল অনেক কঠিন একটা কাজ। কিন্তু অনেক বাধা পেয়েছিলাম।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পরবর্তীতে খালেদার সরকার ডিজাইন পর্যন্ত এগিয়ে ছিল। পরে আমরা ক্ষমতায় এসে সেতুর নির্মাণের সঙ্গে রেল সংযোগ থাকার জোরালো পদক্ষেপ নিই। সে অনুযায়ী সেতুর পাশে রেল সংযোগ করা হয়। কারণ, উত্তরবঙ্গে মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ও মানুষের যাতায়াত সুবিধার জন্য এই উদ্যোগ নেয়া হয়।’
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘জাতির পিতা বলেছিলেন, বাংলাদেশ হবে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড। অর্থাৎ, বাংলাদেশ হবে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে সেতুবন্ধন। আর সেটি করতে গেলে আমাদের ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে হবে। ট্রান্স এশিয়ান হাইওয়ে ও ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে এ দুটোর সঙ্গে যদি আমরা সম্পৃক্ত হতে পারি, তাহলে বাংলাদেশের গুরুত্ব অনেক বেড়ে যাবে। ব্যবসায় বাণিজ্য, কর্মসংস্থান, মানুষের যোগাযোগ বাড়বে। কাজেই এ সেতুটি নির্মাণ হলে আমাদের জন্য বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হবে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে অনেক রেল স্টেশন বন্ধ হয়ে যায়, গোল্ডেন হ্যান্ড শেকের মাধ্যমে ১০ হাজারের বেশি রেলের দক্ষকর্মীকে বিদায় দিয়ে দেয়া হয়। কিছু মানুষের সুবিধার জন্য জিয়া, এরশাদ ও খালেদা রেল ব্যবস্থা সংকোচন করেন। রেলকে প্রায় গলাটিপে হত্যা করতে যাচ্ছিল বিএনপি সরকার। আমরা এসে আবার রেল ব্যবস্থাকে জীবিত করেছি এবং রেলই এখন মানুষের সব থেকে বড় ভরসা।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে ব্যাপক আকারে রেল যোগাযোগ বৃদ্ধি করা হয়। একইসাথে নতুন নতুন ইঞ্জিন আনা হচ্ছে। কিন্তু অগ্নি সংযোগের নামে সব থেকে আঘাতটা করে বিএনপি রেলে আগুন দিয়ে। নতাদের অগ্নি সংযোগের কারণে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। তবে আমরা আস্তে আস্তে সেগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি।’
তিনি বলেন, ‘রেলকে আরও শক্তিশালী করব আমরা। আমাদের পরিকল্পনা আছে ঢাকা- বরিশাল-পটুয়াখালীর পায়রাবন্দর পর্যন্ত রেল লাইন নিয়ে যাবে। সেটিরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমাদের আভ্যন্তরীণ যোগাযোগের জন্য সারাদেশে রেল লাইন নির্মিত হবে। এতে অল্প খরচে পণ্য পরিবহন ও মানুষের যোগাযোগ বাড়বে। কাজেই সড়ক, নৌ ও আকাশ পথ সবগুলোর সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। এতে করে আমাদের দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে।’
জাপানের সহযোগতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাপানের মতো বন্ধু যাদের সাথে আছে। আমি মনেকরি, তাদের আর চিন্তার কিছু নেই। নতুন এ রেল সেতুর নির্মাণে জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
সরকার প্রধান বলেন, ‘আন্তরিকতার সাথে কাজ করতে হবে, দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নত করতে হবে। করোনাভাইরাস যাতে আমাদের ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য যা করা দরকার সব প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দেশবাসীকে আহ্বান জানাবো সকলে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়মগুলো মেনে চলবেন। নিজেকে সুরক্ষিত করেন, অপরকে সুরক্ষিত রাখেন। যাতে করে করোনার প্রাদুর্ভাব আমাদরে ক্ষতি করতে না পারে।’